Wednesday, August 17, 2016

ফোনের র‌্যাম


নতুন যত অ্যান্ড্রয়েডচালিত স্মার্টফোন আসছে, এতে উন্নত প্রসেসর ও গ্রাফিকসের পাশাপাশি বেশি র‌্যামের ব্যবহারও দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, অ্যান্ড্রয়েডচালিত ফোনে বেশি র‌্যাম লাগে কেন? এ প্রশ্নটির বিভিন্ন ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা। কেউ কেউ বলেন, অ্যান্ড্রয়েডে মাল্টিটাস্কিং বা বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য র‌্যাম বেশি লাগে। তবে গেম নির্মাতা গ্লেন উইলিয়ামস এ প্রশ্নটির গ্রহণযোগ্য একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর দাবি, অ্যান্ড্রয়েডে ব্যবহৃত জাভা ও অ্যান্ড্রয়েড প্রসেসিংয়ের সময় জঞ্জাল সংগ্রহ করে বলেই বেশি র‌্যাম লাগে।
র‌্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমোরি, সংক্ষেপে র‌্যাম হলো একধরনের কম্পিউটারের উপাত্ত (ডেটা) সংরক্ষণের মাধ্যম। র‌্যাম থেকে যেকোনো ক্রমে উপাত্ত অ্যাক্সেস করা যায়, এ কারণেই একে র‌্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমোরি বলা হয়।
প্রশ্নোত্তর-বিষয়ক ওয়েবসাইট কোরাতে আইফোনের তুলনায় অ্যান্ড্রয়েডে বেশি র‌্যাম লাগে কেন, এ প্রশ্নটির ব্যাখ্যা দিয়েছেন গ্লেন। তাঁর মতে, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপে জাভা প্রোগ্রামিং ভাষা ও এই অপারেটিং সিস্টেমটির মেমোরি রিসাইকেল করার প্রক্রিয়া হিসেবে জঞ্জাল সংগ্রহ করে থাকে। যখন মেমোরি বেশি খালি থাকে, তখন এই সিস্টেমটি ভালো কাজ করে কিন্তু মেমোরি যখন সীমিত থাকে, তখন অ্যান্ড্রয়েডের পারফরম্যান্স খারাপ হয়।
একটি ডায়াগ্রামের মাধ্যমে কোরাতে গ্লেন দেখিয়েছেন, অ্যান্ড্রয়েড ফোনে সর্বোচ্চ সক্ষমতা পেতে চার থেকে আট গুণ বেশি মেমোরি থাকা দরকার। এ কারণেই আইওএসের তুলনায় অ্যান্ড্রয়েডে বেশি পরিমাণ র‌্যাম দরকার হয়। 
স্মার্টফোনের কত র‍্যাম হলে ভালো? 
ফোনে বেশি মেমোরি মানে বেশি চার্জ খরচ। বিশ্লেষকেরা বলেন, বেশি ভালো ভালো নয়, আবার খুব কমও ভালো নয়। স্মার্টফোনে খুব বেশি র‍্যাম মানে বাড়াবাড়ি, আবার একেবারে কম র‍্যাম হওয়া ঠিক নয়। র‍্যাম কম হলে ফোন হ্যাং হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। আবার বেশি হলে চার্জ দ্রুত শেষ হয়। উদাহরণ হিসেবে ওয়ানপ্লাসের কথা বলা যায়। ওয়ানপ্লাস ৩ স্মার্টফোনে ৬ জিবি র‍্যাম যুক্ত করেও গ্যালাক্সি এস ৭ ও আইফোন ৬এসের সঙ্গে পেরে উঠছে না।
র‍্যাম কত হলে ফোন কেনা উচিত?
স্মার্টফোন কতটা দ্রুতগতির, তা বিবেচনা করতে গেলে র‍্যাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। র‍্যাম কম মানে ফোন ধীরগতির। র‍্যাম হচ্ছে এমন একটি চিপ, যা স্মার্টফোনের সক্রিয় অ্যাপগুলোকে সংরক্ষণ করে রাখে। যত বেশি র‍্যাম, তত বেশি অ্যাপ স্বাচ্ছন্দ্যে চলবে। 
আধুনিক সব স্মার্টফোনেই ১ জিবি থেকে ৪ জিবি পর্যন্ত র‍্যামের ব্যবহার দেখা যায়। তবে ফ্ল্যাগশিপ বেশ কিছু ফোনে ৬ জিবি র‍্যামের ব্যবহারও হচ্ছে। অনেক ফোনেই ৫১২ মেগাবাইট র‍্যাম আছে। এগুলো সাধারণ পুরোনো ও সস্তা চীনা ফোন। এত কম র‍্যাম থাকলে আধুনিক অনেক অ্যাপ বা গেম চালু হবে না। পুরোনো সংস্করণের অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ৫১২ এমবি র‍্যাম দেখা যায়। ১ জিবি র‍্যাম থাকলে অধিকাংশ অ্যাপ চালু করা যায়। তবে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য র‍্যাম ১ জিবির বেশি হলে সুবিধা বেশি। গুগল ক্রোমে একাধিক ট্যাব চালাতে গেলে ১ জিবি র‍্যামে সমস্যা হয়। প্রতিদিন যাঁরা দরকারি কাজে ফোন ব্যবহার করেন, তাঁদের ১ জিবির বেশি র‍্যামের ফোন হলে ভালো।
বিশেষজ্ঞরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২ জিবি ফোনের পক্ষে মত দেন। অ্যাপ চালু রাখতে, গেম খেলতে ও অ্যান্ড্রয়েড হালনাগাদ পেতে ২ জিবি র‍্যাম থাকলে ভালো। তবে একসঙ্গে বেশি অ্যাপ চালু করতে গেলে ২ জিবি র‍্যামেও অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। যদি দুই-তিন বছরের মধ্যে ফোন পরিবর্তনের ইচ্ছা না থাকে, তবে ২ জিবি র‍্যামের ফোন কেনা যায়।
যদি গেম খেলতে ও অনেক অ্যাপ ব্যবহার করতে হয়, তবে ৩ জিবি র‍্যামের ফোনের পারফরম্যান্স ভালো পাওয়া যায়। বাজারে ৩ জিবি র‍্যামের অনেক ফোন সাশ্রয়ী দামেই পাওয়া যায়। ৪ জিবি থেকে ৬ জিবি র‍্যামের ফোনগুলো ফ্ল্যাগশিপ ফোন বলে বাজারে চালানো হয়। গ্যালাক্সি এস ৭ এজ, এলজি জি ৫-এর মতো মডেলগুলোতে ৪ জিবি র‍্যাম আছে। বেশি র‍্যামের ফোনগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। তবে বেশি র‍্যাম হলে ফোনের পারফরম্যান্স ভালো হয়। মাল্টিটাস্কিং যাঁরা করেন, তাঁরা বেশি র‍্যামের ফোনের দিকে ঝুঁকতে পারেন। ৬ জিবি বা ৮ জিবি র‍্যামের ফোন কি বাড়াবাড়ি নয়? যদি বাড়তি এই র‍্যামের জন্য বাড়তি খরচ না পড়ে, তবে বেশি র‍্যাম একটু বেশিই ভালো!

0 comments:

Post a Comment

Thanks for your opinion.